বার্তা প্রবাহ ডেস্ক : দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আমন লাগানোর কাজ প্রায় শেষ। নিচু জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় জমিতে আমন রোপণের কাজ এখনো চলছে। কোথাও ধানের চাড়া সবুজ রং ধারণ করেছে। কোথাও আবার বাতাসে দোল খাচ্ছে কচি ধানের পাতা। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমনের আবাদ যত বিস্তৃত হচ্ছে- চ্যালেঞ্জও বাড়ছে তত। একই সঙ্গে বাড়ছে কৃষকের দৌড়ঝাঁপ।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুম শুরু হতে না হতেই সারের সংকট দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে ফসলের খেতে রোগবালাই, পোকামাকড় ও আগাছাও বাড়ছে। রয়েছে অতিবৃষ্টি ও বন্যার শঙ্কা। আমন উৎপাদনে এখন এই তিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দেশের কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জাতীয়ভাবে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ দশমিক ২ লাখ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন ধান। ওপরের তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে গত বছরের মতো এবারও আমনের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে বিলম্বিত বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোনা- শুধু এই তিন জেলাতেই প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমির আমনের ফসল নষ্ট হয়।
ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা ইউনিয়নের বর্গা চাষি রইছুদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ধানের ছড়াগুলা বাইরানির (বের হওয়া) পরই টানা মেঘ (বৃষ্টি) আর পাহাইড়া ঢলে সব তলাইয়া গেছে গা। খেতের ধান খেতেই পইচ্যা রইছে। এবারও ঢলের ভয় আছে। আর আবাদ শুরু অইতে না অইতেই সারের দাম বাইরা গেছে গা।’ এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান জানান, বোরো আবাদের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আয়ের প্রধান উৎস আমন ধান। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় এবার রোপণে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পোকামাকড়, আগাছা বেশি হয়। এ ছাড়া সার ও বালাইনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় আবাদে খরচ বাড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা সারের জন্য দোকানে গেলে জানানো হয়, সরবরাহ কম তাই দাম বেশি দিতে হবে। এক বস্তা ইউরিয়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা রাখা হচ্ছে। টিএসপির দাম পড়ছে আরও বেশি। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সার বিক্রিতে অতি মুনাফা করছে সিন্ডিকেট। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি করলেও এবার এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো পূর্বাভাস নেই। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি চলে আসায় এখন বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কাও করছি না। বন্যার শঙ্কা এড়ালেও রোগবালাই, আগাছা আর সার সংকটের শঙ্কা এড়ানো যাচ্ছে না। আমন ধানে বিভিন্ন বালাই বিষয়ে এরই মধ্যে আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে দেশের সব অঞ্চলের জেলা, উপজেলা ও ব্লক পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ, আন্তপরিচর্যা, জরিপ কার্যক্রম জোরদার করাসহ আমন ফসল রক্ষায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সার সংকট নিয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (উপকরণ) মো. রওশন আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এলাকাভিত্তিক সারের চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন এই বরাদ্দ সঠিকভাবে কৃষকের কাছে নির্ধারিত দামে পৌঁছানো হচ্ছে কি না সেটি মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের জেলা ও উপজেলাভিত্তিক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ টিমও কাজ করছে।
কৃতজ্ঞতা : রুকনুজ্জামান অঞ্জন