ডাকসুতে গনতন্ত্রে বিশ্বাসী ছাত্রদল ছাত্র-ছাত্রী’দের রায়কে সম্মান জানিয়ে পরাজয় মেনে নিয়ে নিজেদের সংযত রেখেছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।
অনেকে জাশিদের এ জয়কে ২৪ এর গনঅভূত্থানের জয়, আদর্শের জয় , ইসলামের জয় , মুক্তিযুদ্ধের পরাজয় নানান বাইনারী লেন্সে বয়ান তৈরি করবে । যার সবগুলোই ভুয়া বয়ান।
গভীরে গেলে তাদের জয়ের প্রধান কারণ ৫ টি ।
১ ) মেস ও কোচিং সেন্টার রাজনীতি:
শিবির পরিচালিত সারাদেশে মোট ১২ টি মেডিকেল কলেজ , বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারের মোট ৩৫টি শাখা আছে।
ঢাকা শহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে নীলক্ষেত, আজিমপুর,আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকা , পলাশী সহ ঢাকায় শিবিরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০+ মেস আছে ।
যেখানে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছেলে মেয়েরা আসে । যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ,বুয়েট ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রী ।তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা বেশিরভাগ তারা বহন করে ।এছাড়াও হল এর বাইরে অবস্থান কারীদের জন্যে মেট্রোরেলের ৫ হাজার কার্ড করে দেওয়া আছে।
২) শক্তিশালী আর্থিক নেটওয়ার্ক: জাশিদের শক্তিশালী আর্থিক নেটওয়ার্ক আছে যা তারা এসব ছেলে মেয়েদের নিজেদের মতাদর্শে তৈরি করতে ইনভেস্ট করে ।কথিত আছে এ নির্বাচনে তাদের বাজেট ছিলো ১০০ কোটি।
৩) অনলাইন ডেডিকেটেড প্ল্যাটফর্ম ।
৪) মোটিভেটেড ,ডেডিকেটেড এ্যান্ড অর্গানাইজড ওয়ার্ক ফোর্স । ভোটের দিন তাদের ইন্সট্রাকশন ছিলো সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে নিজস্ব ভোট দেওয়া শেষ করে ৪ টা অবধি সেন্টারে বিচরন করা এবং সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের প্যানেলে ভোট দিতে উৎসাহিত করা। এই কাজটি সুচারু ভাবে তারা সম্পাদন করতে পেরেছে বলেই অনেক ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।
৫) প্রত্যেক হলে পাঠচক্র কায়দায় ৫/৬ টা করে আলাদা গ্রুপ সক্রিয় আছে।
আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ; ঢাবি’তে সকল ছাত্র সংগঠন এর মতামত কে উপেক্ষা করে ছাত্রদল এর হল শাখা কমিটি দেওয়া। সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা এটা পজিটিভলি নেয়নি।
ডাকসু নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনের ক্যালকুলেশন এক না। এক হলে ডাকসুর ফলাফল দেখে তারা পিআর থেকে সরে এসে কালকে নির্বাচন চাইতো ।তারা এখন অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন করবে এবং ভালোও করবে সেই উপরের সিস্টেমের কারনে ।
জাশি নিজেদের ও ভাড়া করা উপরের এলিট শ্রেনী সমাজের নিম্ন শ্রেনী থেকে একটি শ্রেনী তৈরি করছে যা দিয়ে তারা সামনে “ক্ল্যাশ অফ ক্লাসেস” তৈরি করে নিজেদের ক্ষমতাবান করতে চাইবে ।
এটা অন্যায় তা আমরা বলবো না । বিশ্ব ইতিহাসে এভাবেই ক্ষমতা দখলের সংঘর্ষ হয় ,হচ্ছে এবং হবে ।
চেতনা , ধর্ম ইত্যাদি এখানে জাস্ট বয়ান তৈরির উপাদান।
বিএনপি তথা ছাত্রদলকে এ বাস্তবতার আলোকে নিজেদের তৈরি করতে হবে ।
একটা বিষয় প্রনিধান যোগ্য ডাকসু’ র তালিকাভুক্ত ভোটার ৩৯৭৭৫। জাশি’র এজিএস ভোট পেয়েছে ১১৭৭২ ( জাশি তাদের ৯৮ শতাংশ ভোট কাস্ট করিয়েছে) । ধরে নেওয়া যায় ডাকসু’র ভোটের ৪ ভাগের ১ ভাগ থেকে একটু বেশী জাশি’র ভোট ওই ১১৭৭২ টি ই। অতএব জাশি কি আসলেই ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থেকেও খুব বেশী এগিয়েছে, তা নয়। কাস্টিং ভোট নাকি ৩১০০০ প্লাস।তাহলে প্রায় ২০ হাজার ভোট জাশি বিরোধী। এইখানেই আসল বয়ান।
কনফিডেন্সিয়াল সোর্স থেকে প্রাপ্ত ছাত্রদল এর সেন্ট্রাল কমিটির প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি’র ঢাবি’ ক্যাম্পাসে তে নুন্যতম গ্রহন যোগ্যতা নেই। তাদের উপস্থিতি সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের কে বিমুখ করেছে। ঢাবি ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারির ও আন্তরিকতার ঘাটতি ছিলো। এই বিষয় টাও মাথায় রাখতে হবে।আবিদ-মাহিম-মায়েদ রা নির্বাচিত হলে তাদের গ্রহন যোগ্যতা বেড়ে যাবে এবং ঢাবি’ প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। খুলনা ভার্সেস আদার্স তো আছেই।
অতএব, ভেংগে পড়ার কিছুই নেই, সময়কে বাস্তবতার নিরিখে কাজে লাগাতে হবে।
শহীদ জিয়ার সততা, স্বজনপ্রীতিহীনতা, দূরদর্শীতা, খাঁটি দেশপ্রেম কে সামনে রেখে,বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা নীতি এবং তারেক রহমানকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে এসে বাবার আদর্শ নিয়ে দলকে সংস্কার করে “এক নেতা এক পদ” নীতি বাস্তবায়ন এবং তৃনমুল কে আস্থায় এনে ডিজিটালাইড ভাবে সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া । পরাজয় থেকে শিক্ষা নেওয়া। ডাকসু নির্বাচন এর প্যানেল গঠনে & হল কমিটি প্রদানের সাথে জড়িত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিষ্চিত করা।
লেখক :- দোজা হাসান, সংগঠক, জাতীয়তাবাদী অনলাইন যোদ্ধা ও
এস এম এ মোসাব্বির, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি, ছাত্রদল।