আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিয়ে এবং খাদ্যের জন্য মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে ইসরায়েল ‘অরাজকতা ও গণহত্যা তৈরি করছে’ বলে সতর্ক করেছেন এক মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা।
ডাক্তারস উইদআউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর গাজা প্রকল্প সমন্বয়কারী ক্যারোলিন উইলেমেন শুক্রবার আল জাজিরাকে বলেন, সাম্প্রতিক দিনে কিছুটা ত্রাণ প্রবেশের পরও অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্যের তীব্র সংকট রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “এখনও এমন কোনো লক্ষণ নেই যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ নিয়মিতভাবে পৌঁছাবে। ফলে প্রতিদিন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবারের সন্ধানে নামছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আরও তিনজন মারা গেছে।
এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ জনে, যার মধ্যে ৯২ জন শিশু।
শুক্রবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন চিকিৎসা সূত্রগুলো। এর মধ্যে ৪৯ জন নিহত ও ২৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহের সময়।
এই সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলের ‘ক্ষুধা সৃষ্টি নীতি’র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা আরও জোরালো হয়েছে। মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা সতর্ক করেছে, গাজায় “দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি” গড়ে উঠছে।
ইসরায়েল সাম্প্রতিক দিনে কিছু ত্রাণ বিমান থেকে ফেলার অনুমোদন দিলেও জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ পদ্ধতিকে ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে গাজায় নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “যদি বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার মতো রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে—যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, অপ্রতুল ও অকার্যকর—তবে সড়কপথে সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রেও তেমন সদিচ্ছা থাকা উচিত।”
“যখন গাজার মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, তখন একমাত্র কার্যকর সমাধান হলো গাজাকে সহায়তায় প্লাবিত করা।”
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওচা’র কর্মকর্তা ওলগা চেরেভকোও আল জাজিরাকে গাজার কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহ থেকে বলেন, কিছুটা ত্রাণ প্রবেশ বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
তিনি বলেন, “যতটুকু ত্রাণ ঢুকছে তা একেবারেই যথেষ্ট নয়, সমস্যার পৃষ্ঠেই হাত পড়ছে না। মাঠপর্যায়ে মানুষের চাহিদা একেবারে বিপুল।”