অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় সংসদে পেশ করা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে বাংলাদেশবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় অপেক্ষমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘লুটেরাদের দেশে পরিণত হয়েছে। সরকার লুটেরাতে পরিণত হয়েছে। লুটেরাদের বাজেট তো হবে লুট করার জন্য। আবার দেখছি সরকার লুট করার নতুন পরিকল্পনা করেছে। তথাকথিত বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সমস্ত জায়গাগুলোতে আয়ের অংশ দেখানো হয়েছে তাতে করে সাধারণ মানুষের ওপর সমস্ত বোঝাটা গিয়ে পড়বে। ব্যয় যেটা দেখানো হয়েছে সেটাও সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে, পকেট কাটার জন্য। অনুদান অথবা ঋণ হিসেবে বিদেশ থেকে এটা আনছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সবগুলো গিয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপরে। মানুষ তো এই বোঝা টানতে টানতে মানুষ আর পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা সহনীয় পর্যায়ে নেই। কয়েকদিন আগে বাড়ল পেট্রল, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে; বাজেটের কারণে এখন আবার বাড়বে। আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরে চারবার করে বাড়বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই পয়সা কি জন্য দিচ্ছি? বিদ্যুৎ ও এনার্জিখাতে যে চুরি হচ্ছে, সেটা সবাই জানে। এই যে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে, ভারতের আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা- সবক্ষেত্রে পকেট ভারী করেছে। কোথায় রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট তো এগুচ্ছে না, কোথায় গেল পায়রা বন্দরের কাজ; ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজগুলো?’
তিনি বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান করছেন না। মানুষ আর পারছে না। মানুষ এখন শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছে। গ্রামে গিয়েও বিপদে পড়েছেন, কর্মসংস্থান নেই। এই বাজেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। পুরো বাজেট মেগা মেগা প্রজেক্ট,মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে। এটা শুধুমাত্র গণবিরোধী নয়; বাংলাদেশবিরোধী বাজেট।’
কালো টাকা সাদা করা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা ন্যায়ের পথে চলে তাদের ওপর গিয়ে এই চাপটা পড়ে, যারা অন্যায় করে তাদের কিছু হয় না। কী করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হতে পারেন। কী করে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান কী করে এত সম্পদ করতে পারেন। এখানে তো গেল দুটা ঘটনা। এমন অনেক ঘটনা আছে।’
তিনি বলেন, ‘চারদিকে তাকালেই দেখবেন। এই যে, মালয়েশিয়ায় কর্মীরা যেতে পারল না। এটা সুশসানের অভাব এবং সরকারের চরম ব্যর্থতা। এখানে সরকারের ৪/৫ জন সংসদ সদস্য জড়িত। কোথায় যাবে মানুষ? তাদের দাঁড়াবার জায়গা নেই। জনগণের সরকার ও জবাবদিহি না থাকলে এই অবস্থাই তো হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সংসদ তাদের। তারাই সরকারি দল, তারাই বেসরকারি দল। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এটি হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম একজন সংসদ সদস্য বেনজীরের ওপর আলোচনা শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মানে সেখানে জনস্বার্থে কোনো কিছু বলা যাবে না। শুধুই স্তুতি আর স্তুতি।’
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দেশের মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ জনপ্রতিনিত্ববিহীন সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই। এ বাজেট এ দেশের দরিদ্র্য মানুষকে শোষনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাজানো একটি হাতিয়ার। এই কল্পনার ফানুস- একদিকে দেশের বর্তমান ধ্বংসপ্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ে এবং অন্যদিকে দেশের গণমানুষের চলমান ত্রাহি ত্রাহি অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে এক নিষ্ঠুর খেলা মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘ফলশ্রুতিতে দেশের ভহিষ্যৎ চিন্তায় এ বাজেট দেওয়া না দেওয়ার কোনোরকম সম্পর্ক তো নেইই, বরঞ্চ এই অলিগার্কিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারের নির্বাচন নাটকের পরে আগামী বৎসরের এই বাজেট সরকার কর্তৃক জনগণকে নিয়ে আরও একটি করুণ ও হৃদয়বিদারক প্রতারণার কথাই মনে করিয়ে দেয়।’