1. onemediabd@gmail.com : admin2 :
  2. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতীত ও বর্তমান ঐতিহ্য : জ্ঞান, নেতৃত্ব ও সামাজিক বিকাশের এক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ - ধানের শীষ
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতীত ও বর্তমান ঐতিহ্য : জ্ঞান, নেতৃত্ব ও সামাজিক বিকাশের এক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ দেশের সব ক্রান্তিকালে জিয়া পরিবার হাল ধরেছে : আমান বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যোগদান এবং আগামীর বাংলাদেশ ভাবনা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ: ফখরুল ২৩ নভেম্বর ফিরছেন তারেক রহমান দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এখন নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন : ফখরুল তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দাবাড়ু নীরকে আর্থিক সহায়তা ধানের শীষের জোয়ার কেউ আটকাতে পারবে না : নবীউল্লাহ নবী শাপলা না দেওয়ার আইনি ব্যাখ্যা দিলে অন্য প্রতীক বিবেচনা করা হবে: নাহিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতীত ও বর্তমান ঐতিহ্য : জ্ঞান, নেতৃত্ব ও সামাজিক বিকাশের এক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে এসেছে। তবুও আধুনিক সামাজিক পরিসরে এ জেলার নাম অনেক সময় নেতিবাচক আলোচনায় উঠে আসে। এই গবেষণাধর্মী প্রবন্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, শিক্ষাগত অর্জন, দানশীলতা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ধর্মীয় প্রজ্ঞা ও বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো— এই জেলার আসল পরিচয়কে পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক ইতিবাচক সামাজিক ও ঐতিহাসিক বোধ জাগিয়ে তোলা।

১. মুখবন্ধ
বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এমন একটি অঞ্চল, যা একদিকে নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্যে পূর্ণ, অন্যদিকে বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম সভ্যতার সংমিশ্রণে গঠিত একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। মোগল-সুলতানী আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান যুগ পর্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষ প্রশাসন, শিক্ষা ও রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে নিজেদের কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন।

তবুও আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়— সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদে এই জেলার নাম প্রায়ই সংঘাত, মারামারি বা অনৈক্যের প্রতীকে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এটি কি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রকৃত পরিচয়? আজকের এই প্রবন্ধের লক্ষ্য হলো— ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান।

২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ঐতিহাসিক দলিল অনুসারে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রাচীন সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। নদীপথে যোগাযোগের সুবিধা, উর্বর কৃষিজমি ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে।

মোগল ও সুলতানী যুগে এখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে আইন, রাজস্ব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকদের প্রভাব বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। সচিবালয়ের বহু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দফতরি প্রশাসক, শিক্ষক ও পেশাজীবী এই জেলার সন্তান।

৩. শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস শতাধিক বছরের পুরনো। ইংরেজ আমল থেকেই এখানে আধুনিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেম মুফতি কাজী দ্বীন মুহাম্মদ (রহ.), ফখরে বাংলা মুফতি মাওলানা তাজুল ইসলাম (রহ.) এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.)— এঁরা শুধু ধর্মীয় চিন্তাবিদই নন, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষায়ও এই জেলার অবদান অনস্বীকার্য। শত শত চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, আইনজীবী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা দেশ-বিদেশে কর্মরত আছেন, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করেছেন।

৪. রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবদান
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং রাজনৈতিক বিকাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক মরহুম আব্দুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন এই জেলার গর্বিত সন্তান, যিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্বে ভূমিকা রেখেছিলেন।
ব্রিটিশ আমলের প্রখ্যাত আইন উপদেষ্টা লাল মিয়া উকিল (আখাউড়া উপজেলার মনীঅন্ধ ইউনিয়নের অন্তর্গত টনকি গ্রাম), পাকিস্তান আমলের খাদ্যমন্ত্রী মরহুম আব্দুর রহমান খান (পুইন্নট খাঁ বাড়ি), এবং প্রাদেশিক সচিব আব্দুল হাই আই.সি.এস. আইয়ুবুর রহমান, তৈবুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিম, সাবেক বিডিয়ারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম দুই উপদেষ্টা জনাব ড. সালে উদ্দিন আহমেদ ও ডক্টর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী সহ অসংখ্য সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা — এঁরা এই অঞ্চলের প্রশাসনিক নেতৃত্বের প্রতীক।

৫. মানবতা ও দানশীলতার ঐতিহ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাসে মানবসেবা ও দানশীলতার উদাহরণ অসংখ্য।
বিচঘরের কৃতি সন্তান মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয় ছিলেন এমন এক দানবীর, যিনি শিক্ষা ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মতো দানবীরদের প্রচেষ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয়, পাঠাগার ও চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা আজও সমাজে আলোকবর্তিকা হিসেবে টিকে আছে।

৬. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সৃজনশীল শক্তি
এই জেলায় সংগীত, নাটক, পালাগান, সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য বহু পুরনো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকগীতি, বাউল ধারা, এবং নাট্যসংস্কৃতি এ অঞ্চলের মানুষের সৌন্দর্যবোধ ও আত্মিক চেতনার প্রতিফলন ঘটায়।
একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সহাবস্থান এই এলাকার সংস্কৃতিকে দিয়েছে এক বহুমাত্রিক চরিত্র।

৭. বর্তমান বাস্তবতা ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ
তথ্যযুগে প্রবেশের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যেমন অন্যান্য জেলাও, সামাজিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। তবে একটি ক্ষুদ্র অশিক্ষিত বা নিম্নস্তরের জনগোষ্ঠীর সংঘাতমূলক আচরণের কারণে পুরো জেলার ইমেজ নষ্ট হচ্ছে— যা বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন নয়।
মিডিয়ার বাছাই করা সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমের অতিরঞ্জিত উপস্থাপনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ‘খুনখারাপির জেলা’ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এটি একধরনের সাংস্কৃতিক অবমূল্যায়ন।

এই নেতিবাচক ধারণা ভাঙতে হলে প্রয়োজন গবেষণা, নথিভুক্ত ইতিহাস, এবং সমাজে ইতিবাচক উদাহরণ প্রচার। জেলার গৌরবময় ব্যক্তিত্বদের জীবন ও অবদান নিয়ে প্রকাশনা, সেমিনার, এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম আয়োজন সময়ের দাবি।

৮. বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ
সমাজবিজ্ঞানের আলোকে বলা যায়— একটি অঞ্চলের সামাজিক পরিচয় গড়ে ওঠে তার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার, শিক্ষাগত কাঠামো এবং সাংস্কৃতিক বোধ থেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেই তিনটি ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ, কিন্তু প্রচারণা ও জনমাধ্যমে ইতিবাচক উপস্থাপনার অভাব রয়েছে।
সুতরাং, এ জেলার প্রকৃত ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন কেবল আবেগের প্রশ্ন নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক পুনরুদ্ধার (Cultural Reclamation) আন্দোলন।

৯. শেষাংশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেবল একটি ভৌগোলিক নাম নয়— এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানবতা ও নেতৃত্বের এক দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক।
যারা এই জেলার মাটি থেকে উঠে এসে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের কীর্তি ও অবদান আজ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অপরিহার্য।
আমাদের সামাজিক দায়িত্ব হলো— সংঘাত নয়, বরং জ্ঞানের আলোয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে চিনে নেওয়া;
অহংকার নয়, বরং গর্বের সঙ্গে বলা—
“এই মাটিই জন্ম দিয়েছে অসংখ্য প্রজ্ঞাবান মানুষ, যাদের উত্তরাধিকারে আমরা সমৃদ্ধ।”

— মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
প্রধান সম্পাদক, ধানের শীষ ডট নেট
www.dhanershis.net

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট