অনলাইন ডেস্ক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনপীড়নের প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। ব্যাপক বিক্ষোভ-পিকেটিংয়ের মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ সরকার বিরোধীদের হরতাল কর্মসূচি। বিরোধীদের হরতালে যানবাহন চলাচলসহ সর্বস্তরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিনের হরতালের মতো গতকালও দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মসূচি পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা, ধরপাকড়সহ গ্রেফতার চালিয়েছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে। বিএনপি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে পুলিশ আরো ২২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং ৮টি মামলায় ৭৯৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করেছে। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের অর্ধশত নেতাকর্মীরেক গ্রেফতার ও আহত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলের এটি দ্বাদশ কর্মসূচি।
বিএনপির বিক্ষোভ: হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। এসময় নেতাকর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাজা দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। আন্দোলনের গতি আরও তীব্র হবে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তারা ঘোষণা দেন। আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ফেরাতে সরকার নাশকতা সৃষ্টি করে বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে গতকাল সকাল ৭টায় রাজধানীর শান্তিনগর মোড় থেকে রাজারবাগ সড়কে নেতা-কর্মী নিয়ে ‘ঝটিকা’ মিছিল বের করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ‘ঝটিকা’ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো এক দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। নেতা-কর্মীরা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কর্মসূচিকে সাফল্যমন্ডিত করছে। কিন্তু সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রুখতে শুধুমাত্র দমন-পীড়ন, গ্রেফতার-হামলা-মামলা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন তারা নিজেরা বাসে আগুন নিয়ে নাশকতা করছেৃ. নাশকতা করে দেশে ত্রাস করে বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বিরোধীদলের আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ফেরাতে এটি তাদের কূটকৌশল। উদ্দেশ্যে এভাবে ত্রাস সৃষ্টি করে একতরফা সাজানো ‘আমরা ও মামুদের’ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া। আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে ফেরাতে ওরা নাশকতা সৃষ্টি করছে।
রিজভী বলেন, সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য ‘১৪ ও ‘১৮ সালের মতো আবার নির্বাচন করছে। এবারের তারা আসনভাগাভাগির নির্বাচন করছে। ওইসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ এই আসন ভাগাভাগির নির্বাচন মানে না। এই মিছিলে দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুব দলের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নাদিয়া পাঠান পাপন, নিলুফার ইয়াসমীন নিলু প্রমুখ নেতারা ছিলেন। রিজভী চলে যাওয়ার পরে নেতা-কর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে এয়ারপোর্ট রোডে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়ার নেতৃত্বে মিছিল ও পিকেটিং করে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি র্যাডিসন হোটেলের সামনে থেকে শুরু হয়ে বনানী আর্মি স্টেডিয়ামের দিকে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গলবার বিকেলে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
হরতাল সফলে রাজধানীর ৫টি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাজধানীর আরামবাগ থেকে ফকিরাপুল কাঁচাবাজার, কাকরাইল মোড় থেকে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি, খিলগাঁও তিলপাপাড়া ও ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। রাজধানীর আরামবাগ থেকে ফকিরাপুল কাঁচাবাজার পর্যন্ত মিছিলের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এ জহির উদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীর কমলাপুরে মিছিল করেছেন যুবদলের নেতা কর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে বের হন তারা। মিছিলে অংশ নেন যুগ্ম-সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রাসেল, শাহ্ নাসিরউদ্দিন রুমন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক কর্মসংস্থান সম্পাদক খন্দকার আল আশরাফ মামুন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সহ কোষাধ্যক্ষ রোকনুজ্জামান রোকন প্রমুখ।
হরতাল সফল করতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডিতে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে এক দফা দাবি ও অবৈধ তফসিল বাতিল চেয়ে হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। মিছিল থেকে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মনজুরুল আলম রিয়াদ ও মহানগর উত্তর ছাত্রদলের ছাত্রনেত্রী উর্মী আক্তার ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করে পুলিশ। মিছিলে অংশ নেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি আকতারুজ্জামান আক্তার, নাছির উদ্দিন নাছির, যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ রহমান, মনজুরুল আলম রিয়াদ, রেহানা আক্তার শিরিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান প্রমুখ।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে শান্তিনগর মোড় থেকে কাকরাইল হয়ে নাইটেঙ্গেল মোড়ে গিয়ে এ মিছিল শেষ হয়। দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তর। রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ, সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল হৃদয় প্রমুখ।
জামায়াতের মিছিল : হরতালের সমর্থনে রাজধানীর ১৮ জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর শাখার নেতাকর্মীরা এসব মিছিলে অংশ নেন। মঙ্গলবার সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল অঞ্চলের উদ্যোগে রাজধানীর পান্থপথে মিছিল, সমাবেশ ও পিকেটিং করেছেন নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য আমিনুল ইসলাম, এ এস মন্ডল, জামায়াত নেতা আবু জুনাইরা, জাওয়াদুল করিম, শ্রমিক নেতা আবু আকাশ, ছাত্র নেতা তাফহীম, আসিফুল হক ও ইসমাঈল চৌধুরী। বিমানবন্দর থানা সেক্রেটারি আবু মাহদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আবু মুসয়াব, এ আর সাব্বির ও ছাত্রনেতা জুলকারনাইম। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য ও কাফরুল পশ্চিম থানা আমির আবু কাউসারের নেতৃত্বে মিছিল কাজীপাড়ায় শুরু হয়ে ৬০ ফুট রাস্তায় এসে শেষ হয়।
হরতালের সমর্থনে সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর-দক্ষিণখান সড়কে মিছিল ও পিকেটিং করেছেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের বিমানবন্দর থানার নেতাকর্মীরা। দক্ষিণখান থানা আমির এ এইচ শাহনেওয়াজ এতে নেতৃত্ব দেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য এম কে এইচের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবু নছর, জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন, আশিক মাহমুদ ও ছাত্রনেতা মাইনুল ইসলাম। মোহাম্মদপুর থানা পশ্চিমের উদ্যোগে মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়কে মিছিল ও পিকেটিং করেছেন নেতাকর্মীরা। থানা শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য রবিউল ইসলাম এতে নেতৃত্ব দেন।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শূরা সদস্য মোহাম্মদ নকিব ফেরদৌসের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে ঢাকা মহানগরী উত্তর মিরপুর-২ নং স্টেডিয়াম সড়কে পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মিরপুর অঞ্চলের কর্মীরা। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মশিউর রহমানের নেতৃত্বে শ্যামলীতে মিছিল বের করা হয়। সদরঘাটে মিছিল, পিকেটিং ও সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য এম আর আজাদ, আবুল ফজল, নুর ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও আজ হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের (১০টি স্পট) মতিঝিল, রমনার বেইলি রোড, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, ডেমরা, সূত্রাপুর, বাদামতলী, ধোলাইপাড়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে জামায়াতের মিছিল ও পিকেটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যান্য দলের বিক্ষোভ : হরতালের সমর্মথনে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণফোরাম-পিপপলস পার্টি তারা আলাদা আলাদাভাবে বিজয়নগর-তোপখানা রোডে মিছিল বের করে।
একদফার আন্দোলনে ক্র্যাকডাউন করতেই ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, নাশকতার সাথে এই চলমান আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা (সরকার) নাশকতা তৈরি করে আন্দোলনকে কালিমা লিপ্ত করতে চায়, ওরা নাশকতা তৈরি করে আন্দোলনের ওপরে ক্র্যাকডাউন করতে চায়। জেলে পুরে রেখে আন্দোলনকে দমন করতে চায় এটা আমরা আগেই বলেছি…এখন খোদ সরকারি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার সরকারের কৃষিমন্ত্রী ঠান্ডা মাথায় পরিষ্কারভাবে শান্তভাবে বসে টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলছেন, আমরা ভেবে-চিন্তে পরিকল্পিতভাবে এই যে, বিএনপিসহ আমাদের বিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জেলে রেখেছেন।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ট্রেনে যে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই, আমরা প্রতিবাদ জানাই। বরাবরই আমরা বলেছি, আন্দোলনে আমরা জনগনের ওপর নির্ভর করি, কোনো সহিংসতা, কোনো উস্কানিতে আমরা পা দিতে চাই না। সরকারের এক দফা দাবি এবং সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ বিজয়নগর ও তোপখানা রোড়ে মিছিল করে। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক রাজা‘র সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণফোরাম-বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে মিছিল বের করেন দল দুটির নেতাকর্মীরা। নয়া পল্টন হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল হয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। বক্তব্য রাখেন গণফোরাম তথ্য ও গণমাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ সঞ্চালনা করেন গণফোরাম ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী।
নির্বাচনের তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীতে মিছিল বের করেছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের সেই মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংগঠনটির নেতা–কর্মীদের বাগ্বিত-া ও ধস্তাধস্তি হয়। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। এরপর মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টন মোড়, বিজয়নগর পানির ট্যাংকের মোড় ঘুরে আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণ অধিকার পরিষদ।
সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে একতরফা নির্বাচন করতে প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ভিন্নমতের রাজনীতি করলেও গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় মানুষের যে সম্প্রীতি ছিল, আওয়ামী লীগ সেটা নষ্ট করে দিয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে ফেলেছে। জনগণ একতরফা তফসিল মেনে নেবে না, আগামী ৭ জানুয়ারি জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। দেশে নির্বাচন নয়, নৌকা বনাম ডামি নৌকা ও স্বতন্ত্র নৌকার লড়াই চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এবি পার্টি বলেছে, বাংলা বসন্তের জন্য কোনো পরাশক্তির সহযোগিতা বা পরিকল্পনা মুখ্য নয় বরং দুঃশাসন, দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণসংগ্রামই ঢাকার বুকে ‘বাংলা বসন্ত’কে অনিবার্য করে তুলেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বিজয়নগরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ‘ক্ষুব্ধ জনতার মিছিল’ বের করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে নেতারা এমন মন্তব্য করেন। ‘ক্ষুব্ধ জনতার মিছিল’টি এবি পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিজয়-৭১ চত্বরে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুব পার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান, আব্দুল বাসেত মারজান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকনসহ অন্যান্যরা।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ আবারও আগুন সন্ত্রাসে মেতে ওঠেছে। এর আগেও তারা গানপাউডার দিয়ে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। দেশে আগুন সন্ত্রাস কারা করে জাতি তা জানে। সরকার নিজেরা নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে। মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিরোধী দলগুলোর ডাকা হরতালের সমর্থনে এক মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মিছিলে এনপিপি মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নূরুল আলম বেপারী, মহাসচিব শাহ মোহাম্মদ বাদল, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, এনডিপি চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন, জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা মো. আবুল হোসেনসহ সমমনা জোটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। তারা দাবি করে, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। সভা-সমাবেশসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা যাবে না বলেও জানান তারা। মঙ্গলবার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করতে সকাল ১১টায় রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক, নয়া পল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল হয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনে দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ পর্যন্ত মিছিল ও সমাবেশ করে তারা। বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারীর সভাপতিত্বে ও গণফোরাম ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণফোরাম তথ্য ও গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু। এসময় গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জনগণের গণ-আন্দোলনকে দমন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিলে তারা এ কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক রাশেদ প্রধান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাশার, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন পারভেজ, ইসলামি ঐক্য জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস রেজা।
কৃতজ্ঞতায় : দৈনিক সংগ্রাম