1. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা - ধানের শীষ
বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ০৪:২২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নির্বাচনে প্রতিটি দল থেকে ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি, সহায়তাকারীরা পাচ্ছেন বিশেষ স্বীকৃতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংবিধান পরিপন্থি : টিআইবি জুলাইয়ে সংস্কার, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন চায় জামায়াত মহাদেবপুর উপজেলা কৃষকদলের আয়োজনে নওগাঁয় গ্রামীণ নারীদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকীতে নওগাঁয় অসহায় শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ মেজর সিনহা হত্যা: আপিলে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসি বহাল শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্র সংস্কার শুরু করেছিলেন : আবু নাসের মেনন ৫ দিনের রিমান্ডে, নতুন মামলায় গ্রেফতার হাসান

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

শাহেদীন =====

বাংলাদেশ আজ এক জটিল রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। গণতন্ত্রের চর্চা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কাঠামো নির্ধারণে এখনই প্রয়োজন সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক সংস্কার ও কার্যকর উদ্যোগ। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং নাগরিক সমাজের দায়িত্ব ও করণীয় নির্ধারণ জরুরি হয়ে উঠেছে।

১. অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি সংস্কারসমূহ

বর্তমান সরকারের একটি সম্মানজনক ও গণতান্ত্রিক প্রস্থানের পূর্বে কিছু মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। এই সংস্কারগুলো কেবল বর্তমান সংকট নিরসনের পথ দেখাবে না, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করবে।

১.১ গুম ও বিচারহীনতার অবসান

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গত এক দশকে প্রায় ৬০০-র বেশি নাগরিক গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে মাত্র ১০% ফিরে এসেছেন। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করছে।
একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে গুম ও রাজনৈতিক হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত “সাম্য ও মানবিক মর্যাদা” নীতির আলোকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

১.২ নির্বাচন কমিশনের প্রকৃত স্বাধীনতা

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও, বাস্তবতায় এটি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রায় ৪০% আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকাটা এই অবক্ষয়েরই প্রতিফলন।
একটি নির্বাচনী সংস্কার কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে—যেখানে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও আইন বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে—নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে।

১.৩ অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ও বিভাজন প্রকট। ১৯৯০ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি “জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল” এর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু করা দরকার, যেখানে সব রাজনৈতিক শক্তি অংশগ্রহণ করবে।

২. নির্বাচন অনিশ্চিতকরণের রাজনৈতিক কৌশল ও তার বিপদ

বর্তমান সময়ে একটি “নিয়ন্ত্রিত বিরোধী জোট” গঠনের মাধ্যমে বিএনপিকে বাইরে রেখে একদলীয় নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিকল্পনা দৃশ্যমান। এই জোটে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও এনসিপির মতো দলসমূহ পরোক্ষভাবে যুক্ত।

মূল কৌশলসমূহ:
• প্রার্থিতা বাতিল: ২০২৩ সালে ১৫০-এর অধিক বিরোধী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, যার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কাজ করেছে।
• রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের একপাক্ষিকতা: বিটিভি ও রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় একতরফা প্রচারের মাধ্যমে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য পরিণতি:
• ৩৫% যুব বেকারত্ব, শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মানের স্থবিরতা ও সুশাসনের অভাবে তরুণদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
• ২০২৪ সালের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ৭০% তরুণ জানিয়েছেন, তারা চায় নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসন।
এই দাবি উপেক্ষা করা হলে, ২০২৬ সালেও গণঅভ্যুত্থানের ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয়।

৩. বিএনপির সম্ভাব্য বিজয়: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ

সুযোগ:
• যুবসমাজের সমর্থন: ২০২৪ সালের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ১৮-৩৫ বছর বয়সী নাগরিকদের ৬৫% বিএনপির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
• নারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা: ২০২৩ সালের স্থানীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নারীর রাজনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

চ্যালেঞ্জ:
• দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন: বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ২০২২ সালে ১৪৭তম অবস্থানে ছিল।
বিএনপিকে একটি ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থা, স্বচ্ছ টেন্ডার পদ্ধতি, এবং জনদাবিভিত্তিক প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
• দলীয়করণ ও চাঁদাবাজমুক্ত সংগঠন: মাঠপর্যায়ের কর্মীবাহিনীকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং অস্থির রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে সাংগঠনিক সংস্কার ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন।

৪. গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের রোডম্যাপ

বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের জন্য করণীয়:
• ৯০ দিনের মধ্যে গুম ও হত্যার তদন্ত শুরু এবং আন্তর্জাতিক কমিশনের মাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ।
• নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন: সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা।
• সম্মিলিত সংলাপ: সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণ।

বিএনপির জন্য করণীয়:
• আধুনিক যুবনীতি প্রণয়ন: যেখানে চাকরি নিশ্চয়তা আইন, কারিগরি শিক্ষার প্রসার, এবং শিক্ষা বাজেট ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
• দুর্ণিতী মুক্ত রাজনীতির ঘোষণা: অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে চাদাবাজী ,দলীয়করণ আর দূর্ণীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।

৫. ২০২৪ সালের আন্দোলনের উত্তরাধিকার ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

২০২৪ সালের গণআন্দোলন ছিল কেবল ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য।
এই চেতনার ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত:
• দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ,
• ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার কাঠামো, এবং
• স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।

৬. উপসংহার ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পুনর্জাগরণ ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে তিনটি মূল স্তম্ভের উপর:
১. রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও দায়িত্ববোধ
২. তরুণ প্রজন্মের সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ
৩. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আইনের শাসনের বাস্তবায়ন

২০২৪ সালের আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল:
“ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ”
এই আদর্শ ধারণ করেই একটি স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নয়নবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের সাহসী পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

© শাহেদীন : একজন গর্বিত বাংলাদেশী

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট