অনলাইন ডেস্ক : জমি দখল করে নিজের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছেন পাঁচজন ভুক্তভোগী।
মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদুল হক চৌধুরীর আদালতে সাকিব হাসান, এ বি এম সালাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম, রেহেনা বেগম ও মাসুম বেপারী ভূমি আইনে এ মামলা দায়ের করেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আল আমিন প্রিন্স জানান।
মামলার বাদী সবাই কালকিনির উত্তর রমজানপুরের বাসিন্দা। তাদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য থাকার সময় গোলাপের জোরজবরদস্তির প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলা ভয় দেখানো হতো।
এখন আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা করছেন তারা। মামলার অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গোলাপ একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ থেকে জয়লাভ করেন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কালকিনির উত্তর রমজানপুর নিজ গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কাছে হেরে যান তিনি।
গোলাপের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সংসদ সদস্য থাকাকালীন আবদুস সোবাহান মিয়া গোলাপ এলাকায় জোর করে জমি দখল করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কেউ জমি লিখে না দিলে হত্যা ও মামলার ভয় দেখানো হতো। পরে ওইসব জমি রেজিস্ট্রি না করেই সেখানে একাধিক ভবন নির্মাণ করেন। গোলাপ তখন এমপি পদে থাকায় এলাকার মানুষ ও ভুক্তভোগীদের কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
মামলার বাদী এ বি এম সালাউদ্দিন বলেন, “আমার পৈতৃক সম্পত্তি জোর করে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবাহান গোলাপ। ভূমি দখল প্রতিকার আইন অনুযায়ী, আমরা পাঁচজন আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি, আদালত ন্যায় বিচার করবে।“
মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম নুরুল আলম বলছেন, “গোলাপ ক্ষমতায় থাকাকালে তার রাজনৈতিক শক্তির কারণে আমরা কেউ জমির কাছাকাছিও যেতে পারিনি। তার তাণ্ডবের কারণে অনেক মানুষ বাড়িঘরেও থাকতে পারেননি। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকেন।
“যখন এমপির ক্ষমতা কমতে থাকে তখন এলাকার লোকজন বাড়িতে আসে। একজন এমপি অন্যের জমি এভাবে দখল করবে এটা কখনই কাম্য নয়।”
গোলাপের এসব অন্যায়ের বিচারের দাবি জানিয়ে বাদী সাকিব হাসান বলেন, “ক্ষমতা পেয়ে কৌশলে জমি দখলে নেওয়ার বিচার হতেই হবে। আর আমাদের জমি আদালতের মাধ্যমে ফেরত চাই। কারণ আমরা তাকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার জন্য কোনো জমি দেইনি। তিনি তার নিজের ইচ্ছেতে জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী আল আমিন প্রিন্স বলেন, “একই মৌজায় দখল হওয়া জমির পরিমাণ, পাঁচ একর ৭৪ শতাংশ। চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আট জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পিবিআইকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।”
এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ। সাবেক এ সংসদ সদস্য বলছেন, তাকে হেয় করতেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একাধিক মামলা করছেন। তিনি অন্যায়ভাবে কারও জমি দখল করে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেননি।
গোলাপ বলছিলেন, “যাদের জমি রয়েছে, সেসব জমি অর্থের বিনিময়ে অথবা কেউ স্বেচ্ছায় দান করেছে। জমির পরিবর্তে কিছু ব্যক্তিকে অন্য জমি দেওয়া হয়েছে।
“এর আগেও নিজের জমি দাবি করে অনেকে আদালতে মামলা করেছে, সেই মামলাও নিষ্পত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু আবারও এই মামলা উদ্দেশ্যমূলক।”