অনলাইন ডেস্ক : টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আগের দুবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এবার তা ধরে রাখতে পারেনি তার দল বিজেপি। ফলে সরকার গঠনের জন্য জোটের শরিকদের কাছে ধরনা দিতে হবে তাকে। এমনকি জোট সরকারের নেতৃত্বেও দেখা যেতে পারে মোদিকে, যে অভিজ্ঞতা তাকে আগে নিতে হয়নি।
গুজরাটের দুইবারের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুইবারের কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি সব কটিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেন। গতবার মোদি ম্যাজিকে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এবার সেখান থেকে ৬৩ আসন কমে তারা নেমে এসেছে ২৪০টিতে। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসন থেকে ৩২টি কম।
অষ্টাদশ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস গতবারের ৫২ আসন থেকে এবার তাদের ঝুলিতে উঠেছে ৯৯। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯ আসন পেয়ে চমকে দিয়েছে। একইভাবে চমকে দিয়েছেন উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের এসপি ৩৭টি আসনে এবং কংগ্রেস ছয়টি জিতে।
নির্বাচনি প্রচারণায় ‘আব কি বার ৪০০ পার’রব তোলা বিজেপির ফলাফল নরেন্দ্র মোদির জন্য ব্যক্তিগত আঘাত বলা যায়। কেননা, তাকে সামনে রেখেই বিজেপি জোট তাদের সব প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। মোদি ম্যাজিকে এবারও নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চেয়েছে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলটি।
এক দশক ধরে মোদি ম্যাজিক ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে আসছিল। এবার সেই ম্যাজিক কাজে লাগেনি। যদিও জোটের শক্তিতে তারাই ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় হতাশ বিজেপি ও তার সমর্থকরা।
অন্যদিকে এবারের ফলাফল কংগ্রেস শিবিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বইয়ে এনেছে। এদিকে কলকাতায় তৃণমূলের আনন্দ উদযাপনের সবুজ রঙে ছেয়ে গেছে চারপাশ।
ছয় সপ্তাহ ধরে চলা সাত দফার এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটির বেশি ভোটার। তাদের প্রায় অর্ধেক ছিলেন নারী।
নির্বাচনের আগে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ঘাঁটিগুলোয় প্রতিশ্রুতির নানা ফুলঝুরি ছড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। তারপরও কেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না তারা?
পর্যবেক্ষক মহল বেশ কিছু কারণ সামনে আনছেন। এর মধ্যে দেশজুড়ে বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য ও বৈষম্য বৃদ্ধি এবং সেনাবাহিনীর নিয়োগে বিতর্কিত সংস্কার কর্মসূচি ছিল সবার সামনে। মোদির উগ্র ও বিভক্তিমূলক প্রচার-প্রচারণা এবং মুসলিমদের নানাভাবে টার্গেট করার বিষয়টিও ভালোভাবে নেয়নি অনেক অঞ্চলের ভোটাররা।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বিরোধী শিবিরও এই বিষয়গুলোই তাদের প্রচারণায় বেশি বেশি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তারা সরকার গঠন করতে পারলে মোদির বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি যা কৃষক ও সৈনিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে তা বাতিল করবে।
এবার ৪০০ পার– এমন অহংকারী প্রচারও মোদির জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। এমন প্রচারণা ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন আশঙ্কা তৈরি করে যে, মোদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তাদের নিয়ে সংবিধানে নেতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, অনগ্রসর ভোট এবার ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোতে ফিরেছে। বিজেপির কিছু নেতা চারশ আসন পেলে সংবিধান বদল করার কথা বলেছিল। সেটাকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছিল ইন্ডিয়া জোট। সেই প্রচার কাজ করেছে।’
শেষ দফা ভোটের আগে মোদি নিজেকে পরমাত্মার প্রেরিত পুরুষ বলে দাবি করেন। তার দাবি, তিনি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন যে তাকে পরমাত্মা পাঠিয়েছেন। এত শক্তি তিনি কোনো জৈবিক প্রক্রিয়া থেকে পাননি। নিজেকে মানবের ওপরে নিয়ে যাওয়ার এই দম্ভও মানুষকে ভীত করে থাকতে পারে।
বিজেপির ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তর প্রদেশে এবার ভরাডুবি ঘটে তাদের। পুরোনো জোটসঙ্গী অখিলেশ যাদব এবার একাই লড়েছেন। ফলে ৮০টি আসনের এই রাজ্যে বিজেপির আসন গতবারের ৬২ থেকে নেমে আসে ৩৩টিতে। অখিলেশ যাদব তুলে নেন ৩৭টি আসন।
এমনকি দীর্ঘদিন পর নিজের রাজ্য গুজরাটেও সবকটি লোকসভা আসন জিততে পারেননি মোদি। এটাও তার একটা ধাক্কা।
জোটের সমর্থন নিয়ে মোদি সরকার গঠন করলেও সেটি কতটা টেকসই হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। কেননা এনডিএ জোটের দুই বড় শরিক- তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং জেডিইউর নীতীশ কুমারের একাধিকবার বিজেপি জোট এনডিএ ছাড়ার এবং ফেরার নজির রয়েছে।