অনলাইন ডেস্ক : দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ‘টালমাটাল’ বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ আশংকাজনক হারে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশি মুদ্রার তারল্য সংকট প্রতীয়মান। বাণিজ্যে বিরাজ করছে স্থবিরতা। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে। গত দুই বছরে টাকার মান কমেছে ৩৮-৫১ শতাংশ, টাকার প্রবাহও হ্রাস পেয়েছে। ব্যাংকগুলোতে টাকার হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে। আর্থিকখাতে বাংলাদেশ রেড জোনে প্রবেশ করেছে। সুতরাং আর্থিক ঝুঁকি খুবই বড়।’
শনিবার বিকালে মগবাজার নিজের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
অলি আহমেদ বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। যেকোনো সময় ব্যাপক ধস নামতে পারে। আমরা মনে করি এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে বাধ্য। হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।’
দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতাকে দায়ী করেন এই রাজনীতিবীদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর যাবত বাকশালী কায়দায় দেশ শাসন করছে। তাদেরকে বলব, আল্লাহর ওয়াস্তে এখন ক্ষান্ত হোন। জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করার সুযোগ দেন। আমি না থাকলে দেশ চলবে না এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে যান।’
দেশের বেকারাত্ম, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, খেলাপী ঋণ, দুর্নীতি-অনিয়ম, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, ঔষধের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, মাদকের বিস্তার, সড়কের অব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা, শিক্ষাব্যবস্থা দুরাবস্থা, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন-মামলা-মোকাদ্দমমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অনিয়ম-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরেন অলি আহমেদ।
বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সর্বসাধারণের ওপর জুলুম-নির্যাতন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেশে কখনই শান্তি ফিরে আসবে না, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটবে না।’
রণাঙ্গনের এই বীর বিক্রম আরও বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষক-শ্রমিক-যুবক-ছাত্র সমাজ সবাই মিলে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির নেতৃত্বে নতুন কর্মসূচি ইনশাল্লাহ ঘোষণা করব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন, প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইনশাল্লাহ এই বাকশালী সরকারের পতন হবে, দেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।’
অলি আহমেদ বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ধবংস ও স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারত সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে দায়ী। আমি নিজে শুনেছি, কয়েকদিন পূর্বে ভারতের কংগ্রেসের সভাপতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা পাকিস্তানকে দুই টুকরা করে তাদেরকে দূর্বল করে দিয়েছি। তার এই বক্তব্য সুস্পষ্ট বুঝা যায়, বাংলাদেশের জনগন তাদের বন্ধু নয়। বিগত কয়েক বছর ভারত সরকার বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুরূপ দায়িত্ব নিয়েছে।’
‘আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভারতের জনগনের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বিরুপ মন্তব্য নাই। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভারত সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগনের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগনের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনোযোগী হবে। আসুন আমরা একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করি, ভালো প্রতিবেশি হিসেবে বসবাস করি… এতেই সকলের মঙ্গল নিহিত।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভারতকে আমাদের দেশের সমুদ্র বন্দর, স্থল বন্দর ও বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অনেকগুলো অসম চুক্তি স্বাক্ষরও করেছে। তারপরও কেন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
‘মেহেরবানী করে আমাদেরকে আমাদের মতো করে থাকতে দিন। ভারত সরকারের বর্তমান মনোভাব পরিবর্তন না হলে উভয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান. এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, কে কিউ স্যাকলায়েন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।