অনলাইন ডেস্ক : জামিনে মুক্তি পেলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ‘এখনো পরোক্ষভাবে বন্দি’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা আব্বাস। সোমবার শাহজাহানপুরস্থ নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বিএনপির সমস্ত নেতা-কর্মীদেরকে এখনো ইনডাইরেক্টলি বন্দি করে রাখা হয়েছে এখন পর্যন্ত আমরা বন্দিই আছি, আমরা এখনো স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারি না। এই ভয় লাগে কখন পুলিশ আসে কখন নিয়ে যাবে। দেশের জনগন-জাতি আজকে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
গত শনিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিন বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তার দেয়া একটি কয়েকটি গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে মুক্তির পর গত পরশু দিন আমি একটি কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করি। সেই কর্মসূচি ছিলো লিফলেট বিতরণ। আমরা জনগনকে তুলে ধরতে চেয়েছি যে, অন্যায়ভাবে লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্যের এই যে অসহনীয় ঊধর্বগতি। ওই কর্মসূচিতে আমি কিছু বক্তব্য রেখেছিলাম। আমরা ওই নির্মোহ কথা-বার্তা দুই একটি সরকার সমর্থিত সংবাদ পত্রে আমরা বক্তব্যে খন্ডিত কিছু অংশ বিকৃতভাবে তুলে ধরেছেন। তিন-চারটি পত্রিকা এটা করেছে তাদের নাম আমি বলতে চাই না। তাতে আমার আমার দলের এবং দেশের অনেক মানুষ একটু বিভ্রান্ত হতে পারে সেই বিভ্রান্তি কাটানোর লক্ষ্যে আজকে আমার এই সংবাদ ব্রিফিং।’
মির্জা আব্বাস আরও বলেন ‘আমার বক্তব্যটা ছিলো এরকম “আওয়ামী লীগ জনগনের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। ফলে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। জনগনের দাবি যদি মেনে নিতে বিএনপি নির্বাচনে যেতো। তারা কোনো দাবি মানে নাই।” এই বক্তব্যটাই কয়েকটি পত্রিকা টুইস্ট করেছে, বহু কথা-বার্তা..বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে সেজন্য আজকে আমি আপনাকে এখানে এটা পরিস্কার করলাম। এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানে না, এই সরকার নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের দাবি মানে নাই, এই সরকার নির্বাচনে কমিশন পূর্ণগঠন চেয়েছিলাম সেটাও মানে নাই, ওরা কিছুই মানে নাই। ফলোশ্রুতিতে বিএনপি কিংবা এদেশের গণতান্ত্রিক কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নাই। সেই কারণে আপনারা দেখেছেন দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখান করে ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে যায় নাই। সরকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে আমি সেটাই বলতে চেয়েছিলাম। এই সরকার থাকলে নির্বাচনে যাবো না। কিন্তু আমরা এই বক্তব্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাব, দেশটা একটা বিপদের মধ্যে আছে। সরকারের কাছে এদেশে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে। দেখুন একজন মন্ত্রী বড়োই দিয়ে ইফতার করেন। সেই মন্ত্রীর বোধহয় অভিজ্ঞাতা নাই যে, খালি পেটে বড়োই খেলে যে কত মারাত্মক সমস্যা হতে পারে এটা মন্ত্রী জানেন না। জানেন না এই কারণ উনারা খেজুর, আঙ্গুর, বিভিন্ন দামি ফল-ফ্রুট দিয়ে ইফতার করে থাকেন। জনগণ জন্য বলতে হবে বড়োই খেতে হবে, জনগনের জন্য বেগুনির(বেগুন দিয়ে তৈরি) বদলে পেঁপেনি(পেঁপে দিয়ে তৈরি) খেতে হবে, জনগনের জন্য এসমস্ত ওদের জন্য না।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘রমজান শুরু হচ্ছে। আমি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো একটা সময় পাইনি যে, এই দেশের লোক স্বস্তিতে রমজান পালন করেছে। আমি দেখলাম পত্রিকায় খবরটি এসেছে, গাজা যেখানে নারকীয় হত্যাকান্ড হয়েছে সেই গাজায়ও সেখানে ঈদের মতো রমজান মাস শুরু করেছে। আমাদের দেশে সেই অবস্থা নাই। আমি যখন তারাবীর নামাজ পড়তে যাবো দেখবেন যে, বিদ্যুত নাই হঠাৎ করে অন্ধাকার হয়ে গেছে। বাজারে যাবো কিছু কিনতে যাবো দেখবো কিনতে কিনতে টাকা নাই শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, এখানে যারা সাংবাদিকরা আছেন আপনারা বাজারের খোঁজ-খবর বেশি রাখেন। আমি বাজারে কম যাই কিন্তু বাজারের টাকাটা আমাকেই দিতে হয়। আমি খেয়াল করলাম আমি যে টাকা আগে দিতাম এখন বেশি টাকা দিলেও সেই টাকায় হয় না। বাজারের জন্য কাউকে টাকা দিলে বলে যে, স্যার এই টাকায় হবে না। যে মাছটা কিনে ছিলাম এতো টাকা দিয়ে সেই মাছটা আরো বেশি টাকা দাম। আমি বিশ্বাসই হয় না। মাঝে মাঝে একটা কৈ মাছের দাম শুনে অবাক লাগেৃভাবতেই পারি না, ডিমের দাম একটা ডিমের দাম ২০/২৫ টাকা ছিলো। জেলখানায় একটা ডিমের দাম ২০ টাকা। আমি শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। সব মিলিয়ে রমজান মানুষের জন্য কতটুকু স্বস্তি দায়ক হবে তা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে। একথায় রমজান স্বস্তিদায়ক হবে না। এই রমজানের মধ্যেও জিনিসপত্রে দাম বাড়বে, কোনটাই কমবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, এবারের মতো জেল কিন্তু আমি কখনো খাটি নাই। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে আমার জেল জীবন শুরু হয়েছে। আমি নিরেট মাটির ফ্লোরের মধ্যে শুয়েছি। নট সিমেন্ট, নিরেট মাটির মধ্যে শুয়েছি, অ্যালুমিনিয়ামের ভাংগা-চুরা আঁকা-বাঁকা প্ল্যাট, অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস। এরমধ্যে পানি খেতে হয়েছে। সেই থেকে এই যাবত প্রথম যখন জেল খাটি তখন আমার বয়স ২৭ বছর। আজকে আমার বয়স ৭৭ ছুঁই ছুঁই। এবারের জেলখানা একটু ব্যতিক্রম।
‘সবাই সব সুবিধা পাচ্ছে। যখনই আমরা বলি আমরা একটু বাইরে হাটবো, আমার ডায়াবেটিস আছে, আমার হার্টের সমস্যা আছে, তখন বলে না স্যার হাটা যাবে না। আমরা বলি, ওই যে হাঁটছে তারা বলেন, ওরা আর আপনারা এক নন, দেয়া যাবে না। যেটা আমার প্রয়োজন সেটা দিতে ওদের বাধা। এভাবে কোনো সুবিধা জেলখানায় আমাদেরকে দেয়া হয়নি। এমনকি চিকিৎসা সুবিধাও তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা বললে বলে কিনাৃনা স্যার নিষেধ আছে কোনো ডাক্তার আনা যাবে না।
তিনি বলেন, এবারের জেল ছিলো সব দিক থেকে কষ্টকর। এক সময় বয়স ছিলো তখন কিছু মনে হয়নি। এখন বয়স হয়েছে। এবার যখন জেলে ঢুকি আমার এক ট্রাংক ভর্তি ঔষধ ছিলো অর্থাৎ ত্রিশ ইঞ্চি বাই বাইশ ইঞ্চি একটা ট্রাংক ছিলো যাতে সকল রকমের ঔষধ ছিলো। তারপরেও কোন ঔষধ কোন সময়ে লেগে যায় ঠিক তো নাই।এই অবস্থা নিয়ে আমরা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছি।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরাতো সমায়িকভাবে মুক্তি পেয়েছি। আমাদের তো আর খালাস করে দেয়নি। অসুস্থতার জন্য জামিন দিয়েছে। আমরা এখন ওই যে খাঁচা পোষা মুরগীর মতো অনেকটা। যখন দরকার নিয়ে যাবে আবার।”
আমাদের প্রায় যতগুলো ছেলে জামিন হয়েছে খুশি হয়ে গেছে। আমি তাদের বললাম জামিন খুশি হয়েও না, খালাস হলে খুশি হইও খালাসতো দেয়নি।। বিএনপির সমস্ত নেতা-কর্মীকে এখনো ইনডাইরেক্টলি বন্দি করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা বন্দি আছি।