অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে, যা স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অরাজক লুটেরা খুনি গণধিকৃত বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি বার বার বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। বিদেশি প্রভূ। তারা দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছে।
সোমবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গোরপোতা—দহগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি রাফিউল ইসলাম টুকলুকে গতকাল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাত্র ছয় দিন আগে গত ২২ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে বিনা উসকানিতে সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এই হত্যার পর বিএসএফ’র পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় তা অভিসন্ধিপ্রসূত, উপহাসমূলক এবং নির্জলা মিথ্যাচার। কিন্তু আওয়ামী ডামি সরকার’ সীমান্তে অব্যাহত এই নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে এই অবধি প্রতিবাদ তো দূরের কথা টু শব্দ পর্যন্ত করার সাহস দেখাতে পারেনি। উল্টো ভারতের তোষামোদিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মন্ত্রীরা।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “এই বিষয়ে আমরা এখন কথা বলতে চাই না।” নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন—“এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা! এ নিয়ে আলোচনার কী আছে”। অন্য এক মন্ত্রী বলেছেন, “নো কমেন্টস।”
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে হত্যাকে কীভাবে একজন মন্ত্রী বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেন? সীমান্তে ভারত দখল, হত্যাযজ্ঞ চালালেও আমরা কিচ্ছু বলতে পারবো না। কয়েক বছর আগে এক আওয়ামী মন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না! এই হচ্ছে তাবেদার আওয়ামী ডামি সরকারের নতজানু নীতি। ক্ষমতার জন্য এরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে কুণ্ঠিত নন।
তিনি আরও বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে ২০২৩ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী—বিএসএফ ৩০ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। প্রাণহানি ছাড়াও ৩১ জন বাংলাদেশিকে মারাত্মক শারীরিক নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে বিএসএফ। কেবল সীমান্তে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে লুটপাট, হামলা, ভাংচুর, এমনকি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও কোন প্রতিবাদ করেন না শেখ হাসিনার নতজানু সরকার। ক্ষমতার জন্য একান্ত বাধ্যগতভাবে গোলামি করছেন তিনি। এটাই কি স্বামী—স্ত্রীর ভালোবাসার নমুনা ?
রিজভী বলেন, ‘ভারতের সাথে পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। আর সমুদ্র সীমান্ত শ্রীলংকার সাথে। আমরা জানি, এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ মোতায়েন আছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ৫টি দেশের সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ কোনো লোক নিহত হওয়ার কোনো খবর খুব একটা চোখে পড়ে না। সকলেই জানেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনে কোনো দেশ অন্য দেশের নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করতে পারে না। কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে গ্রেফতার করে সে দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও বিএসএফ তার কোনো তোয়াক্কাই করে না। তারা ‘ট্রিগার হ্যাপি নীতি’তে কাজ করছে। তারা সীমান্তে বাংলাদেশিকে পাখির মতো গুলি করে মারে। এটা আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী ভয়াবহ অপরাধ। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতে চোরাচালানের শাস্তি নিশ্চয়ই মৃত্যুদন্ড বা গুলি করে মেরে ফেলা নয়। আর বিএসএফের সেই শাস্তি দেয়ার অধিকারও নেই। কিন্তু বিএসএফ বেপরোয়া মনোবৃত্তি নিয়ে হত্যার নেশায় মেতে উঠেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিনিময় যদি নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিক অথবা বিজিবির সদস্যের প্রাণ হয়, তাহলে এটি নিশ্চিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখন অরক্ষিত। আর অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা। এ কারণেই আমরা বলি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। আর এখন আমাদের চলমান আন্দোলন, দেশ এবং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। আর সেক্ষেত্রে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। জনগণের মালিকানা নিশ্চিত হয় সবল, প্রাণবন্ত গণতন্ত্র অনুশীলনের মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক মুখে দুই কথা বলেন। কিন্তু তার এই দ্বৈততার মধ্যেই প্রকৃত সত্যটি বের হয়ে আসে। তিনি আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে বলেছেন—‘আমাদের সরকারকে কোন বিদেশি শক্তি বসায়নি’। একই সভায় তার বক্তব্যের আর এক জায়গায় তিনি বলেছেন ‘নির্বাচনে ভারত জোরালোভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, এটি জরুরি ছিল’। আবার তিনি আর একটি সভায় বলেছেন ‘নির্বাচনের সময় ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিল, স্বীকার করতেই হবে’। আবার তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সব অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙ্গেছে’। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়—ভারতের সহযোগিতায় বিনা ভোটে তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা আবারও দখল করেছে। ভারতের প্রতিভু হয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক সর্বনাশা কতৃর্পক্ষে পরিণত হয়েছেন। জনসমর্থনহীন শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের দৌরাত্মে এক উদ্ভট, দৃষ্টান্তহীন এবং নিষ্ঠুর খামখেয়ালি রাজার মতো ভারতকে খুশি করতেই ব্যস্ত রয়েছেন।
‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের আওতার মধ্যে ক্রমাগতভাবে ঠেলে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে একটি ডামি রাষ্ট্র বানানোর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা কার্যকর করছেন তিনি। বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তারা পুরো দেশটাকেই ডামি রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের কথায় স্পস্ট যে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়। ক্ষমতার উৎস ভারত। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভোটের আশা করে না এবং বাংলাদেশের জনগণের ভোটের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস নেই। ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে।’
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতের গোলামি করলেও এ দেশের মানুষ ভারতের গোলামির জিঞ্জির পরিধান করবে না। ঐতিহাসিকভাবেই যেকোন ধরণের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাহসী জনগণের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের বীরত্বগাঁথা ঐতিহ্য রয়েছে।ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নাই। তবে আমাদের আপত্তি ভারতের শাসকদের পলিসি, নীতি নিয়ে। তাই দল—মত নির্বিশেষে ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ,স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তাতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ওলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।