1. onemediabd@gmail.com : admin2 :
  2. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
তিন জোটের রূপরেখা, জুলাই সনদ, গণভোটের অসহায় প্রসব বেদনা ও সমসাময়িক ভোটের রাজনীতি - ধানের শীষ
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
হামলা-হেনস্তায় মনোবল হারাচ্ছে পুলিশ বাহিনী নানা অনিয়মে বিএনপির সাত হাজার নেতা-কর্মী বহিষ্কার: মামুন মাহমুদ রাজধানীতে বিএনপির ব্যতিক্রমী মিছিল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মহেন্দ্রক্ষন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি কি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে? ৩১৫ বি৩ লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল এর বাৎসরিক গ্রান্ড র‍্যালি অনুষ্ঠিত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর এবং “ঝুলে” যাওয়া ফেব্রুয়ারির কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ; ৩৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ : ডা. জাহিদ

তিন জোটের রূপরেখা, জুলাই সনদ, গণভোটের অসহায় প্রসব বেদনা ও সমসাময়িক ভোটের রাজনীতি

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া

মুখবন্ধ:
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কয়েকটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, এর মধ্য দিয়ে সৃষ্ট তিন জোটের রূপরেখা, জুলাই সনদ, ১৯৯৬-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং পরবর্তীতে সেই ব্যবস্থার বিলুপ্তি ও সমসাময়িক নির্বাচনী রাজনীতির বিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একদলীয় শাসন ও গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লে. জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ নয় বছর তিনি একনায়কতান্ত্রিক শাসন চালান। ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে তার বিরুদ্ধে студ怒 আন্দোলন, সাধারণ ধর্মঘট ও রাজনৈতিক আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এই আন্দোলনকে সফলভাবে পরিচালনা及 সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান বিরোধী দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

তিন জোটের রূপরেখা: ঐক্যের মঞ্চ

১৯৯০ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। এই আন্দোলনকে সংহতিপূর্ণ ও একক লক্ষ্যের দিকে পরিচালনার জন্য তিনটি প্রধান রাজনৈতিক শিবির একটি সমঝোতায় আসে। এই তিন জোট ছিল:

১) আওয়ামী লীগ (৮-দলীয় জোট): তখনকার প্রধান বিরোধী দল, নেতৃত্বে শেখ হাসিনা।
২) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি (৭-দলীয় জোট): আরেক প্রধান বিরোধী দল, নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়া।
৩) বাম জোট (৫-দলীয় জোট): বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল দলের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে ছিল জাসদ, Workers Party ইত্যাদি।

এই তিন জোটের মূল রূপরেখা বা লক্ষ্যগুলো ছিল:
এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো।
সংসদীয় ব্যবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন পরিচালনা করা।

এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়।

এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। তবে, সরকার গঠনের পরপরই আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে এবং সংসদ বয়কট শুরু করে। এই রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য ১৯৯২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যস্থতায় “জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা-মুখ্য opposition whip-এর মধ্যে সাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক” স্বাক্ষরিত হয়।

এই সনদের মূল শর্তানুযায়ী:
পরবর্তী সংসদীয় নির্বাচন একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (Non-Party Caretaker Government) অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
এই সরকার প্রধানতত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা (Opposition Leader)।
নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিপরিষদ, যারা নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
এই সনদ ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী চুক্তি, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তোলার একটি রূপরেখা প্রদান করে।
অসহায় গণভোটের প্রসব বেদনা: ১৯৯৬-এর সংকট ও সমাধান

তিন দলের রূপরেখা স্বাক্ষরিত হলেও বিএনপি সরকার তা বাস্তবায়নে টালবাহানা করতে থাকে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি সরকার তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে নিজেদের অধীনে একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করে। বিরোধী দলগুলি এই নির্বাচনকে “ভোটারবিহীন নির্বাচন” আখ্যা দিয়ে ব্যাপকভাবে বয়কট করে। ফলাফলস্বরূপ, বিএনপি সংসদে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

দেশজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হরতালের কারণে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
এই নির্বাচনের ফলে দেশ একটি গভীর সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়।
জনগণ ছিল মূলত অসহায়; তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও ক্ষমতাসীন দলের একগুঁয়েমির কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।

এই সংকট কাটাতে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে এবং রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর সাংবিধানিকভাবে ১৩তম সংশোধনী পাশ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (Caretaker Government) চালু করা হয়। সেই বছরের জুন মাসে প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন।

সমসাময়িক বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতি: টিজিটি থেকে বর্তমান বাস্তবতা

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার (CTG) ব্যবস্থা ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮—এই তিনটি সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে পরিচালনা করে। এই নির্বাচনগুলো তুলনামূলকভাবে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য ছিল বলে বিবেচিত হয়।

যেভাবে বদলে গেল পরিস্থিতি:
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় আসে।
২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। সরকারের যুক্তি ছিল, এই ব্যবস্থা অসাংবিধানিক এবং সামরিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তৈরি করে।বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি, এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে এবং দাবি করে যে সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

সমসাময়িক ভোটের রাজনীতির চরিত্র:

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন: বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী জোট নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বয়কট করে। ফলাফলস্বরূপ, বেশিরভাগ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হয়।
২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন: বিএনপি অংশ নিলেও তারা ব্যাপক কারচুপি, ভোটার দমনপীড়ন ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকও নির্বাচনের স্বচ্ছতায় প্রশ্ন তোলেন। ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট: আজকের বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতি গভীরভাবে বিভক্ত। সরকারের পক্ষের যুক্তি হলো, তারা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করছে। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষ দাবি করছে, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, যার ফলে প্রায়ই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাত ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

শেষাংশ:
১৯৯০-এর তিন জোটের ঐক্য, জুলাই সনদ এবং ১৯৯৬-এর সংকট থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম—এগুলো ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে একটি সংকটমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক পথে পরিচালিত করার ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা। এই ব্যবস্থাটি একটি সময়ের জন্য সফলও হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই ঐতিহাসিক সমঝোতা ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি দেশের নির্বাচনী রাজনীতিকে একটি তীব্র ধ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে গেছে। অতীতের এই ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, একটি শক্তিশালী, সক্রিয় ও সচেতন নাগরিক সমাজ এবং সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাই কেবল বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে তার সত্যিকারের প্রসব বেদনা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ভবিষ্যতের পথ কেমন হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য, দূরদর্শিতা এবং জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার উপর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট