1. onemediabd@gmail.com : admin2 :
  2. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
বাংলাদেশের রক্ত স্নাত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব: ভীতি, বাস্তবতা ও ধর্মরাজনীতির অন্ধকার ছায়া - ধানের শীষ
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
হামলা-হেনস্তায় মনোবল হারাচ্ছে পুলিশ বাহিনী নানা অনিয়মে বিএনপির সাত হাজার নেতা-কর্মী বহিষ্কার: মামুন মাহমুদ রাজধানীতে বিএনপির ব্যতিক্রমী মিছিল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মহেন্দ্রক্ষন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি কি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে? ৩১৫ বি৩ লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল এর বাৎসরিক গ্রান্ড র‍্যালি অনুষ্ঠিত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর এবং “ঝুলে” যাওয়া ফেব্রুয়ারির কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ; ৩৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ : ডা. জাহিদ

বাংলাদেশের রক্ত স্নাত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব: ভীতি, বাস্তবতা ও ধর্মরাজনীতির অন্ধকার ছায়া

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২২৭ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া

বাংলাদেশ রাষ্ট্র আজ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় টিকে থাকার পর একটি নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি— আগামী ৭০ বছরের ভেতর কি এই দেশ তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারাবে? কেউ কেউ দাবি করেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশকে সরাসরি শাসনের আওতায় আনতে চায়। আবার কেউ বলেন, জামায়াতের রাজনীতিই বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি করছে। এ ধরনের দাবি নিছক আতঙ্কের ভাষা নয়, বরং এর পেছনে আছে ইতিহাস, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির কঠিন বাস্তবতা।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা: সিক্কিম, ইরাক, ইউক্রেন ও গাজা

১৯৭৫ সালে সিক্কিমের ঘটনা আজও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক দৃষ্টান্ত। গণভোট ও রাজনৈতিক সংকটকে অজুহাত বানিয়ে ভারত সেখানে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন কায়েম করে। ক্ষুদ্র দেশ বা অঞ্চল যখন বড় শক্তির জাতীয় নিরাপত্তা বা কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সংঘাতে আসে, তখন আন্তর্জাতিক আইনও তাদের রক্ষা করতে পারে না।
ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে।
রাশিয়া ইউক্রেনে ‘জাতিগত নিরাপত্তা’ ও ‘ঐতিহাসিক দাবি’ দেখিয়ে আক্রমণ করেছে।
আমেরিকা ইরাক ও আফগানিস্তানে হামলার সময় ‘সন্ত্রাসবাদ দমন’ আর ‘জাতীয় নিরাপত্তা’কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এই সব উদাহরণ দেখায়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে “জাতীয় নিরাপত্তা” নামের অজুহাত ছোট রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের মতো ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশও তাই ঝুঁকিমুক্ত নয়।

জামায়াতের রাজনীতি ও “গাজাওতুল হিন্দ” ধারণা

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কিত শক্তি। তাদের নেতাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। যদিও দলটি বহুবার ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে, কিন্তু তাদের আদর্শ সবসময়ই ধর্মকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে ঝোঁকপ্রবণ।
জামায়াতের শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ তাহের সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন—“গাজাওতুল হিন্দ শুরু হবে।” ইসলামী ঐতিহ্যে এই ধারণা ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মযুদ্ধের এক ‘ভবিষ্যদ্বাণী’র সঙ্গে যুক্ত। বিশ্লেষকদের মতে, ঐতিহাসিক দিক থেকে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন বহু শতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তাই এই বর্ণনাটি অতীতকে পুনর্জীবিত করার রাজনৈতিক কৌশল।
কিন্তু এর বিপজ্জনক দিক হলো:
ধর্মের নামে রাজনীতি সবসময় ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।
ধর্মরক্ষার নামে যেকোনো আন্দোলন পরিণত হয় এক প্রকার ফ্যাসিবাদে।
হুমকি হচ্ছে— হাসিনার স্বৈরতন্ত্র বিদায় হলেও, ভবিষ্যতে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে তা ৭০ বছরেও বিদায় করা কঠিন হবে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: ভয় নাকি পারস্পরিক নির্ভরশীলতা?

একদিকে আছে ভয়—ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে চায়।
অন্যদিকে আছে বাস্তবতা—ভারত আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারদের একজন।
দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।
বিদ্যুৎ, পানি, রেল ও সীমান্ত নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতা বাড়ছে।
জনমত জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়।
অতএব, ভারতের প্রতি ভয় যেমন বাস্তব, তেমনি সহযোগিতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতাও এক অস্বীকারযোগ্য সত্য।

রাষ্ট্রের জন্য শিক্ষা: ভয় নয়, প্রস্তুতি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে কেবল আবেগ নয়, প্রয়োজন কৌশলগত বাস্তবতা।
১. শক্তিশালী নির্বাচনব্যবস্থা ও নাগরিক অধিকার রক্ষা।
২. বহুমাত্রিক অর্থনীতি—শুধু ভারতের ওপর নয়, চীন, আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক।
৩. স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যম—যাতে ধর্ম বা জাতীয় নিরাপত্তার নামে ক্ষমতাকেন্দ্রীকরণ রোধ করা যায়।
৪. সীমান্ত সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা।

দিনের শেষে:
মানুষ কী চায়?

বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ চায় না। তারা চায়—
প্রতিবেশীর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক,
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা,
কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও শান্তি।

কিন্তু রাজনীতির মঞ্চে যখন ধর্মরক্ষার নামে ফ্যাসিবাদ হাজির হয়, তখন গণতন্ত্রের পথ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ইতিহাস আমাদের সতর্ক করে দেয়— সিক্কিমের মতো ক্ষুদ্র দেশ হঠাৎ করেই এক বৃহৎ শক্তির অঙ্গীভূত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎও নিরাপদ থাকবে কেবল তখনই, যখন জনগণ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি একসাথে দাঁড়াবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে।

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
প্রধান সম্পাদক, ধানের শীষ ডট নেট
www.dhanershis.net

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট