1. onemediabd@gmail.com : admin2 :
  2. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
আসিফ, এনসিপি ও বিএনপির কৌশল: রাজনীতির এক জটিল সমীকরণ - ধানের শীষ
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

আসিফ, এনসিপি ও বিএনপির কৌশল: রাজনীতির এক জটিল সমীকরণ

মো: হাসান আলী রেজা দোজা
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

মো: হাসান আলী রেজা দোজা

হঠাৎ করেই রাজনীতিতে আসিফ প্রসংগ মুখরোচক ভাবে দৃশ্যমান।
ধানমন্ডিতে আসিফের ভোটার হওয়া এবং ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি শুধু নির্বাচনী কৌশল নয়, বরং বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে এক গভীর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত বহন করছে।

সম্প্রতি এনসিপি-ঘনিষ্ঠ নেতা আব্দুল কাদেরের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট থেকে স্পষ্ট হয়েছে, দলটির ভেতরে বিভাজন এখন প্রকাশ্য রূপ নিতে যাচ্ছে। এনসিপির মূলধারা ও আসিফ-ঘনিষ্ঠ অংশের মধ্যে বিরোধ দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

আসিফকে ঘিরে বিতর্ক ও বিভাজন
গত এক বছরে আসিফের নানা কর্মকাণ্ড বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। বিশেষত ইসরাক হোসেনের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন ইস্যুতে সংঘাত এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া আসিফকে বিএনপি সমর্থকদের চোখে প্রায় “শত্রু” পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে আসিফ ছিলেন প্রশাসক নিয়োগের মূল তদারককারী। এনসিপির পরিকল্পনা ছিল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে নিজেদের পছন্দের প্রশাসক বসানো-একটি ছায়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ভবিষ্যতে দলের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করত।

এই পরিকল্পনাই ভেস্তে দেয় ইসরাকের আন্দোলন। আন্দোলনের চাপে সরকার নির্বাচন ঘোষণার ইঙ্গিত দিলে ইসরাক পিছু হটেন, এবং তাতেই এনসিপির পুরো কৌশল ব্যর্থ হয়। ঘটনাটি সাধারণ মানুষের চোখে তেমন গুরুত্ব না পেলেও, বিএনপি নেতৃত্ব সেটিকে পর্দার আড়ালে একটি কৌশলগত জয় হিসেবে গ্রহণ করে।

বিএনপির ঠাণ্ডা মাথার রাজনীতি
অনেকে অভিযোগ করেন, গত এক বছরে বিএনপি “কিছুই করেনি”, কিন্তু বাস্তবে দলটি অনেকগুলো পর্দার আড়ালের গেম খেলেছে। তারা ইসরাক-আসিফ সংঘাতকে নিছক ব্যক্তিগত ক্ষমতার লড়াই হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এ কারণেই এখন বিএনপির অনেক সমর্থক ক্ষুব্ধ যে দলটি নাকি আসিফকে ছাড় দিতে পারে-যিনি এনসিপি থেকে দূরত্ব তৈরি করে বিএনপির ছায়ায় ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এই সম্ভাবনা তৃণমূলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

ক্ষমতা ও প্রভাবের বাস্তবতা
এনসিপি ও আসিফ বর্তমানে নিজেদের অনেক প্রভাবশালী মনে করলেও সেই শক্তির ভিত্তি বেশ নড়বড়ে। তাদের ক্ষমতার মূল দুটি উৎস-“জুলাই অভ্যুত্থান”-পরবর্তী জনপ্রিয়তা এবং বর্তমান সরকারের ভেতরে সীমিত প্রভাব।

নতুন সরকার গঠনের পর প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তিত হলে এই প্রভাব অনেকাংশে হ্রাস পাবে। আসিফের হাতে তখন মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা থাকবে না, থাকবে শুধু “জুলাই পোস্টার বয়” পরিচিতি। যদি বিএনপি তাকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয় এবং তিনি জয়ী হনও, তবু তার বর্তমান প্রভাবের সামান্য অংশও থাকবে না। বরং তিনি হয়ে উঠতে পারেন “বিএনপি সরকারের ইনু”-দলে উপস্থিত কিন্তু প্রভাবহীন।

বিএনপি নেতৃত্ব সম্ভবত এই হিসেবটাই মাথায় রাখছে-আসিফকে ছাড় দিলেও ভবিষ্যতে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে না।

এনসিপির ক্রমহ্রাসমান শক্তি
একসময় ৫০ আসনের দাবি তোলা এনসিপি এখন ১৭-২০ আসনের জন্য বারবার বৈঠক করছে এবং সর্বোচ্চ ছয়টি আসনের নিশ্চয়তা পাচ্ছে। দলটির অভ্যন্তরীণ বিভাজন, নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব ও দিকনির্দেশনার অভাব তাদের অবস্থানকে আরও দুর্বল করছে।

এই অবস্থায় বিএনপির কৌশলগত নীরবতা রাজনৈতিকভাবে তাদের পক্ষে কাজ করছে। এনসিপি ও আসিফ-গ্রুপের দূরত্ব যত বাড়বে, ততই বিএনপি ভবিষ্যতের সমীকরণে লাভবান হবে।

বিএনপি সমর্থকদের নৈতিক অবস্থান
এখন প্রশ্ন উঠছে-বিএনপি সমর্থকদের অবস্থান কী হওয়া উচিত? দলীয় নেতৃত্ব হয়তো কৌশলগত কারণে আসিফকে কিছু ছাড় দিতে পারে, কিন্তু নৈতিকতা ও আস্থার প্রশ্নে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া গুরুত্ব রাখে।

যদি বিএনপি সমর্থকরা মনে করেন আসিফের কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ও আদর্শের পরিপন্থী, তবে তাদের প্রকাশ্যে সেই অবস্থান জানানো উচিত। এটি নেতৃত্বকে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে। তারা হয়তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আসিফকে বাদ দেওয়ার সুযোগ রাখবে, অথবা ছাড় দিলেও বলতে পারবে-“তৃণমূলের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

শেষ কথা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিদ্ধান্তগুলো কখনও সরল পথে আসে না। প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে জটিল হিসেব, ভারসাম্য রক্ষা ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক বিন্যাস।

আসিফ, এনসিপি ও বিএনপি এখন সেই হিসেবের কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে নেতৃত্ব কৌশল নির্ধারণ করছে, কিন্তু জনসমর্থন নির্ধারণ করবে রাজনীতির ভবিষ্যৎ।

শেষ পর্যন্ত মনে রাখতে হবে-রাজনীতির মূলে থাকে নৈতিকতা ও আস্থা। নেতৃত্বের কৌশল যতই সূক্ষ্ম হোক, জনগণের বিশ্বাসই একমাত্র শক্তি যা রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখে। বিএনপি ও তার সমর্থকদের জন্য এখন সময় সেই বিশ্বাসের পরীক্ষা দেওয়ার।

— মো: হাসান আলী রেজা দোজা
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক
প্রকাশক, www.dhanershis.net
চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টি
গ্লোবাল কনজ্যুমার এন্ড হিউম্যান রাইটস ফোরাম

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট