
ধানের শীষ ডেস্ক : এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সমগ্র দেশ ও জাতি উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে উপদেষ্টা পরিষদ, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ছাত্র-জনতা, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আজ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। সারা জীবন গণতন্ত্র, দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে আজ তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে সংকটাপন্ন অবস্থায়। তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষই আজ সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন জানাচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় দেশের এই রাজনৈতিক অভিভাবকের রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। দোয়া চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। গতকাল ভোরে মামুনুল হক হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। বিশিষ্ট মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীসহ আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেয়া চাওয়া হয়েছে। দুপুরে হাসপাতালে দেখতে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তাঁরা সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। গত দুই দিন হাসপাতালের সামনে ও রাস্তায় দলীয় নেতা-কর্মীসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ ভিড় জমান এবং উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। ‘মৌলিক বাংলা’ নামে একটি ব্যানার টাঙিয়ে সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় ‘গণ মোনাজাতের’ আয়োজন করা হয়। এ সময় উদ্বিগ্ন শত শত মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তা সদস্যদের। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতালে এবং তার আশপাশে ভিড় না জমিয়ে তাঁদের প্রিয় নেত্রীর জন্য যাঁর যাঁর অবস্থানে থেকে দোয়া করার জন্য অনুরোধ জানান। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক কেন্দ্রের নির্দেশনায় হাসপাতালের সামনে উৎকণ্ঠিত মানুষের ভিড় কমানোর পদক্ষেপ নেন।
জানা গেছে, হাসপাতালের সিসিইউতে দেশিবিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এনসিপি নেত্রী ডা. তাসনিম জারা খালেদা জিয়াকে দেখে এবং খোঁজখবর নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘নেত্রীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এখন তাঁর জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’ যুক্তরাজ্য, চীনসহ কয়েকটি দেশ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা প্রদানের প্রস্তাব করেছে। সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ কয়েকটি দেশের অ্যাডভান্স হেলথ সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা প্রদানের বিষয়ে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা কিংবা স্থিতিশীলতা তৈরি না হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।