1. onemediabd@gmail.com : admin2 :
  2. info@www.dhanershis.net : ধানের শীষ :
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘গুগলি চাল’ বনাম গণভোট–নির্বাচন: রাষ্ট্রক্ষমতার নতুন প্রতিযোগিতায় বিএনপির সম্ভাবনার জানালা - ধানের শীষ
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ অপরাহ্ন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘গুগলি চাল’ বনাম গণভোট–নির্বাচন: রাষ্ট্রক্ষমতার নতুন প্রতিযোগিতায় বিএনপির সম্ভাবনার জানালা

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ এহছানুল হক ভূঁইয়া
প্রধান সম্পাদক, ধানের শীষ ডট নেট
www.dhanershis.net

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন নাটকীয়তার ঘাটতি নেই, তেমনি নেই কৌশলগত ‘চমক’ বা অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপের—যা অনেক সময় ক্ষমতার পালাবদলের পূর্বাভাস দেয়। ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে বলা হয় গুগলি—দেখতে একরকম, কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন খেলা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত—জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের ঘোষণা—রাজনীতির মাঠে ঠিক এমনই এক গুগলি।

এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। এবং তা যতটা সরকারের কাছে সুবিধাজনক বলে মনে হচ্ছে, ততটাই নতুন সুযোগের জানালা খোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিরোধী দল বিএনপির জন্যও।

গণভোট ও নির্বাচন একই দিনে: উদ্দেশ্য কি?
সরকারের ব্যাখ্যায় যুক্তি করা হচ্ছে—সময়, ব্যয় ও প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে নির্বাচন ও গণভোটকে একীভূত করা প্রয়োজন। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক কৌশল বিশ্লেষণে এমন পদক্ষেপ সাধারণত একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করে:
এক দিনে জনগণের ম্যান্ডেট ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নকশা—দুটোই নির্ধারিত হবে।

এটি সরকারের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলনও হতে পারে, আবার বিরোধী শক্তিকে বিভ্রান্ত ও ব্যস্ত রাখার একটি কৌশলগত চালও হতে পারে। গণভোটের প্রশ্ন, প্রচারণা, ব্যালট ব্যবস্থাপনা—এসবের মাঝে বিরোধী দলের প্রচলিত নির্বাচনী প্রস্তুতি ব্যাহত হওয়া স্বাভাবিক।

ঝুঁকি ও সংকট: ক্ষমতার গুগলির অদৃশ্য দিক
গণভোটকে নির্বাচনের সঙ্গে একদিনে করা কোনো সহজ সিদ্ধান্ত নয়। বরং এতে রয়েছে বহুস্তরের ঝুঁকি—
১) বৈধতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন
যদি নির্বাচন–গণভোট একত্রে আয়োজন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে বিরোধীরা ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে খুব সহজেই। দেশে–বিদেশে প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক হলে গণতান্ত্রিক বৈধতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২) প্রশাসনিক চাপে ত্রুটি
দুটি বড় অনুষ্ঠান একই দিনে পরিচালনার চাপ প্রশাসনকে ভুল করতে বাধ্য করতে পারে। ব্যালট, নিরাপত্তা, পর্যবেক্ষণ—সব স্তরেই অপ্রস্তুত অবস্থা ঝুঁকি বাড়াবে।

৩) বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপি যদি এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক কৌশল” হিসেবে ব্যাখ্যা করে বয়কট বা কঠোর আন্দোলনের পথ গ্রহণ করে, তবে নির্বাচনী দৃশ্যপট জটিল হয়ে উঠতে পারে। আবার অংশ নিলে তাদের সামনে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনারও দরজা খুলতে পারে।

বিএনপি কোথায় দাঁড়াবে? সম্ভাবনার তিন পথ
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করলে বিএনপির সামনে মূলত তিনটি কৌশলগত পথ খোলা থাকে:

১) নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা
বিএনপি যদি গণভোট–নির্বাচন উভয় ক্ষেত্রেই অংশ নেয়, তবে তারা তাদের জনসমর্থনকে রাজনৈতিক ম্যান্ডেটে রূপান্তর করতে পারবে। এটি তাদের সংসদীয় রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

২) গণভোটকে ‘ফাঁদ’ আখ্যা দিয়ে বয়কট
এই পথ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিরোধী আন্দোলনে চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হতে পারে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখায়—বয়কট দীর্ঘমেয়াদে বিরোধীর রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করেই।

৩) সীমিত অংশগ্রহণ ও জোন-ভিত্তিক কৌশল
বাংলাদেশের মেরুকৃত রাজনীতিতে জোন-ভিত্তিক নির্বাচনী লড়াই অনেক সময় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি চাইলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসন লক্ষ্যভিত্তিকভাবে টার্গেট করতে পারে, আর গণভোটের প্রশ্নে পৃথক রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারে।

রাষ্ট্রক্ষমতার হাতছানি: কেন এখন বিএনপির জন্য সময়টি গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সামনে একধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে—
সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের সুযোগ রয়েছে,
নির্বাচন ও গণভোট উভয় ক্ষেত্রেই ইস্যু-ভিত্তিক প্রচারণা চালানোর সুযোগ রয়েছে,
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিদেশি কূটনীতিকদের দৃষ্টি এখনই বাংলাদেশের নির্বাচন-প্রক্রিয়ার দিকে,
এবং সবচেয়ে বড় কথা—দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সামনে আছে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের একটি বাস্তব সুযোগ।

কিন্তু সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও কম নয়—
ভুল কৌশল, অগ্রহচ্যুতি বা বিক্ষোভের কারণে অস্থিরতা বাড়লে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

যে পথে এগোলে সংকট কমবে
একটি স্থিতিশীল পথচলার জন্য সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের সামনে কিছু জরুরি দায়িত্ব রয়েছে—
১. সবার আগে স্বচ্ছ তফসিল ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা।
২. রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলা সংলাপের ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা।
৩. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি সর্বোচ্চ মাত্রায় বাড়ানো।

এই পদক্ষেপগুলো ছাড়া নির্বাচন–গণভোট একত্রে করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্থিতির বদলে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

গুগলি নাকি রাজনৈতিক বুমেরাং?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাহসী এবং রাজনৈতিকভাবে অপ্রত্যাশিত—একটি গুগলির মতোই। এই গুগলি প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করবে নাকি নিজস্ব শিবিরেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে—তা নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর:
১. প্রশাসনিক সক্ষমতা
২. রাজনৈতিক সংলাপ
৩. বিরোধী দল বিএনপি–র কৌশলগত সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্রযাত্রা আজ এক দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। গণভোট–নির্বাচন একত্রের এই সিদ্ধান্ত হতে পারে নতুন গণতান্ত্রিক সূচনার ভিত্তি, অথবা একটি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার পূর্বাভাস। এখন দেখার বিষয়—এই গুগলি শেষ পর্যন্ত কার উইকেট ফেলে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট